কার্গিলের ইতিহাস

এক নজরে কার্গিল

প্রতিষ্ঠাকাল : ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯০২ ইংরেজি
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত ১৯০৩ ইংরেজি
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্থায়ী অনুমোদিত ১৯০৮ ইংরেজি
পাইলট স্কীমের অন্তর্ভুক্ত : ১৯৭৮
প্রথম বিজ্ঞান বিভাগ চালু : ১৯৬১
প্রথম বাণিজ্য শাখা চালু : ১৯৮১
সরকারিকরণ : ১ জুন ১৯৮৫
প্রথম প্রধান শিক্ষক : রাজেন্দ্র লাল বসাক।
কার্গিল হাইস্কুল প্রতিষ্ঠায় যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন :
মৌলভী বশিরউল্যা চৌধুরী (সাব রেজিষ্ট্রার)
প্রসন্ন কুমার দাস (মোক্তার)
বাণী নাথ দাস (মোক্তার)
মৌলভী আহাম্মদ মিয়া (মোক্তার)
প্রাক্তন ছাত্র যারা পরবর্তীতে এ স্কুলে শিক্ষকতা করেছিলেন :
মোজাফ্ফর হোসেন উকিল
জ্যোতিলাল রক্ষিত
আফলাতুন উকিল
হেরম্ভ কুমার মজুমদার
দেবেন্দ্র পাল
রমা প্রসাদ দাস
মোহাম্মদ হোসেন
শিব শংকর চক্রবর্ত্তী
হেদায়েত উল্লা তালুকদার
মহিউদ্দিন চৌধুরী
মোঃ আবু সুফিয়ান
মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন
বিভিন্ন সময়ে স্কুল পরিচালনা কমিটিতে যারা ছিলেন :
মৌলভী হাফিজ উদ্দিন খাঁ (১৯১২, সেক্রেটারী), বশির উল্যা চৌধুরী (সেক্রেটারী), মুন্সি আহাম্মদ মিয়া মোক্তার, বাণী নাথ দাস, প্রসন্ন কুমার দাস মোক্তার, অনন্ত মোহন দাস, দেবেন্দ্র কুমার নাগ মোক্তার, সারদা উকিল, যোগেশ চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় উকিল, নিবারণ চন্দ্র দাস উকিল, গিরিশ চন্দ্র চক্রবর্তী, রাজেন্দ্র উকিল (সেক্রেটারী), ডাঃ মনমোহন দাস (সদস্য), ডাঃ নিত্যলাল দাস, দেবেন্দ্র পাল (এমবিবিএস), আলহাজ্ব ওসমান গনি তালুকদার, আলহাজ্ব আবদুল বাতেন সওদাগর (সেক্রেটারী), মীর সফিকুর রহমান (সেক্রেটারী), এডভোকেট জাহিদুর রহিম, মৌলভী আবদুল আজিজ, এডভোকেট মজহারুল ইসলাম, এডভোকেট আবদুল ওয়াছেক, মোস্তফা কামাল পাশা (সাবেক সংসদ সদস্য), আলহাজ্ব এডভোকেট এ কে এম আবদুর রহিম, ওবায়েদ মিয়া (ওবায়েদ কেরানি), হালিম তালুকদার, হালিম উল্লা সেরাং প্রমুখ।
কার্গিল হাইস্কুলের বর্ণনা :
কার্গিল হাইস্কুল প্রায় পাঁচ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। এই জমি দান করেছিলেন দানবীর বশিরউল্যা চৌধুরী (সাবরেজিষ্ট্রার)। স্কুল ভবনটি ছিল ঐ টাইপ দক্ষিণমুখী। হেডমাষ্টারের কামরা ছিল মাঝামাঝি স্থানে। স্কুলের সীমানার চারদিকে প্রচুর নারকেল গাছ শোভা পেতো। অন্যান্য গাছও ছিল অনেক। স্কুল কম্পাউন্ডের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া ছিল। স্কুলের পশ্চিম পাশে এবং রাস্তার পূর্ব পাশে ট্রেনিং স্কুল ও হোস্টেল ছিল যা ১৯৫৪ সালে বন্ধ হয়ে যায়। স্কুলের পূর্বপাশে দক্ষিণামুখী টিনের ছাউনির হোস্টেল ছিল। দুটি পুকুরও ছিল। পুকুরের ঘাট পাকা ছিলো এবং নামাজের জন্য ছিলো একটি পাকা জায়গা। স্কুলের প্রবেশ পথে একটি পাকা গেট ছিলো। এতে কার্গিল সাহেবের নাম ও স্কুল প্রতিষ্ঠার বছর শ্বেতপাথরে খোদিত ছিলো। স্কুলের প্রবেশ পথ হতে পুকুর পর্যন্ত পাকা রাস্তা ছিলো। ১৯৯৪ সালে ঐতিহ্যবাহী কার্গিল হাইস্কুল সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
কমনরুম ও লাইব্রেরি :
এক সময় কার্গিল হাই স্কুলের কমনরুম খুবই দর্শনীয় ছিল। উচ্চ রাজকর্মচারি এবং নামীদামী ব্যক্তিবর্গ সন্দ্বীপ সফরে এলে সন্দ্বীপের দর্শনীয় স্থান হিসেবে কার্গিল হাইস্কুলের কমনরুম দেখানো হতো। বিরাট হল ঘরে কমনরুম অবস্থিত ছিল। কমনরুম এবং স্কুল লাইব্রেরি একই হল ঘরে অবস্থিত ছিল। হল ঘরের চারদিকের দেয়ালে মূল্যবান উপদেশ বাক্য ইংরেজি ও বাংলায় লেখা ছিল। চারদিকের দেয়ালে আরও টাঙানো ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন মনীষী এবং বরেণ্য শিক্ষকদের তৈলচিত্র। কার্গিল হাইস্কুুলের গ্রন্থাগার বহু বছরের সংগ্রহে সমৃদ্ধ। হাজার হাজার বিভিন্ন প্রকারের মূল্যবান বই ও সাময়িকী গ্রন্থাগারে সংগৃহিত ছিল একসময়। “ক্যালকাটা রিভিউ” কার্গিল হাইস্কুল নিয়মিত সাবস্ক্রাইব করতো। গ্রন্থাগারের বই ও সাময়িকী প্রায় ৫০টি কাঁচের আলমিরায় শোভা পেতো। এ ধরনের সুসজ্জিত গ্রন্থাগার ও কমনরুম চট্টগ্রাম বিভাগে বা অন্য কোথাও খুব একটা ছিল না। লাইব্রেরিও কমনরুমের দায়িত্বে ছিলেন ভূগোলের বরেণ্য শিক্ষক যোগেশ চন্দ্র পাঠক।
ভূগোল কক্ষ :
কার্গিল হাইস্কুলে ভূগোল শিক্ষার জন্য রাজকুমার চক্রবর্তীর অর্থায়নে ১৯৪০ সালে “জিওগ্রাফি রুম” চালু করা হয়। তখন কার্গিল হাইস্কুুলে যারা অধ্যয়ন করেছেন তাঁরা রাজকুমার বাবুর নামে নামাঙ্কিত জিওগ্রাফি রুম নিশ্চয় দেখে থাকবেন। বহু সাজ সরঞ্জাম ও বহুবিধ উপকরণে জিওগ্রাফি রুমটিকে সুসজ্জিত করা হয়েছিল। ঐ ধরনের সুসজ্জিত “জিওগ্রাফি রুম” আজকাল অনেক কলেজেও দেখা যায় না। জিওগ্রাফি রুমের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ভূগোল বিশারদ যোগেশ চন্দ্র পাঠক।
বিজ্ঞানাগার :
ইংরেজি রাজত্বে ডাঃ মনোমোহন দাসের অর্থায়নে কার্গিল হাইস্কুলে “ডাঃ মনোমোহন সায়েন্স ওয়ার্ড” স্থাপিত হয়। এ ওয়ার্ডে বিজ্ঞানের যাবতীয় যন্ত্রপাতি ও বিদ্যমান ছিল।
ছাত্রবৃত্তি : অধ্যাপক রাজকুমার চক্রবর্তী কার্গিল হাইস্কুলে দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য তাঁর পিতার নামে “হরে কৃষ্ণ” বৃত্তির প্রবর্তন করেন ১৯৩২ সালে। বৃত্তির হার ছিল মাসিক পাঁচ টাকা। কুছিয়ামোড়া নিবাসী মৌলভী গোলাম খালেক সাহেব কার্গিল হাইস্কুল ফান্ডে অনেক টাকা দান করেন। কার্গিল হাইস্কুলে যে মুসলমান ছাত্র পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করতো তাঁকে মৌলভী গোলাম খালেক প্রদত্ত টাকা হতে বৃত্তি দেয়ার রীতি বহু বছর যাবত প্রচলিত ছিল।
ঐতিহাসিক কার্গিল মাঠ :
কার্গিল হাইস্কুলের মত কার্গিল মাঠেরও একটি ঐতিহাসিক মূল্য আছে। দেশের এবং বিদেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের পদচারণায় এই মাঠের গুরুত্ব অনেক বাড়িয়েছে। খেলাধূলা, রাজনৈতিক সমাবেশ, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য সন্দ্বীপে কার্গিল মাঠের বিকল্প কিছুই ছিল না। সন্দ্বীপের সব বড় ধরনের টুর্নামেন্ট, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃটিশ আমলে লর্ড কারমাইকেল সন্দ্বীপ সফর করলে এমাঠেই তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। তিনি ১৯১৬ সালের ২২ জানুয়ারি সন্দ্বীপ আগমন করেন। সন্দ্বীপের কাজ শেষ করে কক্সবাজার গিয়ে আবার সন্দ্বীপ ফেরেন, তখন কার্গিল হাইস্কুলের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী ও জ্ঞান বিকাশিনী সভার সভাপতিত্ব করেন। অনলবর্ষী বক্তা মাওলানা ইছমাইল হোসেন সিরাজী ১৯১৭ সালে কার্গিল হাইস্কুুলের মাঠে এক ঐতিহাসিক জনসভা করেন। ১৯২৩ সালের নির্বাচনে স্বরাজ পার্টির পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের মুসলিম আসনের জন্য শেরে চাঁটগা কাজীম আলী মাষ্টার মনোনয়ন পান। তিনি ভোট সংগ্রহের জন্য সন্দ্বীপ, হাতিয়া, রামগতি প্রভৃতি অঞ্চল সফর করেন। সন্দ্বীপে তিনি কার্গিল হাইস্কুল মাঠে নির্বাচনী সভা করেন। ১৯২৮ সালে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কার্গিল হাইস্কুলের মাঠে এক স্মরণীয় সভা করেন। সভায় সভাপতি ছিলেন প্রসন্ন কুমার দাস। ১৯৪৬ সালে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য সচিব ডক্টর অমিয় চক্রবর্তী কার্গিল হাইস্কুলে রিলিফক্যাম্প পরিদর্শন করেন। কার্গিল হাইস্কুলে তাঁকে সংবর্ধনা ও মানপত্র দেয়া হয়। ১৯৬৩ সালে ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আয়ুব খান হেলিকপ্টার যোগে হাইস্কুল মাঠে অবতরণ করেন। পাকিস্তান আমলে আজম খান এ মাঠে বক্তৃতা করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুস ছাত্তার ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ এ মাঠে সমাবেশ করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের তরুণ কর্মীদের সঙ্গে এ মাঠে মতবিনিময় করেছেন এবং কর্মীদের অনুরোধে একটি সংগীত পরিবেশন করেন। আর সন্দ্বীপে খেলাধূলা বিশেষ করে ‘ফুটবল’ কার্গিল হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার পরপরই সূচনা হয়।
কার্গিল ব্রিজ :
১৯০০ সালে প্রথম সাওতাল খালের ওপর একটি বাঁশের পোল লোকাল বোর্ডের অর্থে নির্মিত হয়। এই বাঁশের পোলটি নষ্ট হয়ে গেলে ১৯০২ সালের প্রথমভাগে তৎকালিন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান মিঃ কার্গিল জেলা বোর্ড হতে কাঠের পোলের জন্য অর্থ মঞ্জুর করেন। উক্ত অর্থে বাঁশের পোলের পরিবর্তে নির্মিত কাঠের পোলের নামকরণ করা হয় কার্গিল ব্রিজ।
বয় স্কাউট :
১৯২৪ সালে কার্গিল হাই স্কুলেই সন্দ্বীপের বয় স্কাউট আন্দোলনের সর্বপ্রথম সূচনা হয়। এ বছর স্কুলের শিক্ষক যোগেশ চন্দ্র পাঠক কলকাতা হতে বয় স্কাউটের ট্রেনিং নিয়ে এসে ১৯২৫ সালে সন্দ্বীপের মধ্যে সর্বপ্রথম এ স্কুলেই বয় স্কাউট আন্দোলন গড়ে তোলেন।
ভবন নদী গর্ভে বিলীন : ১৯৯৪
বর্তমান স্কুলের জন্য ‍ভূমি অধিগ্রহন : ২০০০ সাল, জমির পরিমাণ : ১ একর।
বর্তমান স্কুলের স্থান: ওয়ার্ড-৫, সন্দ্বীপ পৌরসভা, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম।
নতুন ভবন উদ্বোধন : ২০০৫।

তথ্যসূত্র : কানাই চক্রবর্ত্তী সম্পাদিত, ঢাকা থেকে প্রকাশিত, শতবর্ষে কার্গিল হাইস্কুল ‘১৯০২-২০০২’ ও কার্গিল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ সাইফুল হাসান

লক্ষ্য উদ্দেশ্য

১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত “কার্গিল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদ” একটি সামাজিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে কার্গিল পরিষদ নিয়ম নীতি ও গঠনতন্ত্র মেনে পরিচালিত হচ্ছে।
মানুষ সামাজিক জীব, নিয়ম শৃঙ্খলা ছাড়া সমাজ জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে উন্নতি লাভ করতে পারে না। আর এ উন্নতির জন্য প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। সমাজের উন্নয়ন ঘটলে জাতির উন্নয়ন ঘটে। কার্গিল পরিষদের মূল উদ্দেশ্য হল, প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পারষ্পরিক যোগাযোগ, সম্প্রীতি, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রী দের পড়া লেখায় উৎসাহ প্রদান, প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদেরকে চিকিৎসা সহায়তা, অসচ্ছল ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা ও মেধা বৃত্তি প্রদান, বার্ষিক মিলন মেলা ও বনভোজন, ইফতার ও দোয়া মাহফিল এবং বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপন। কার্গিল পরিষদের মূল ভিত্তি হবে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা, সেবা, দেশের প্রতি আনুগত্য এবং স্বাধীনতার আদর্শ সমুন্নতা রাখা। কার্গিল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদ’ই সকল প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের ঐক্যের প্রতিক।